সর্বশেষ

চড় তো দূরের কথা, কিছুই ঘটেনি’ নাসুম ইস্যুতে মুখ খুললেন হেরাথ ও পোথাস

২০২৩ বিশ্বকাপ চলাকালে ড্রেসিংরুমে নাসুম আহমেদকে কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে শারীরিকভাবে আঘাত করেছেন বলে গুঞ্জন রটেছিল।

সেই গুঞ্জনের ভিত্তিতেই লঙ্কান এই কোচকে চাকরিচ্যুত করে ফারুক আহমেদের নেতৃত্বাধীন বিসিবি। এই অভিযোগ বরাবরই জোরালোভাবে অস্বীকার করে আসছিলেন হাথুরুসিংহে। এবার তার সেসময়ের কোচিং প্যানেলে থাকা আরও দুই সদস্য বললেন একই কথা।

বাংলাদেশের সাবেক সহকারী কোচ নিক পোথাস ও স্পিন বোলিং কোচ রঙ্গনা হেরাথ বলছেন, এরকম কোন কিছুই ঘটেনি। নাসুমকে থাপ্পড় মারার ঘটনাকে দুজনের কাছেই বানোয়াট ও অতিরঞ্জিত মনে হয়েছে।

অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যম ‘কোড স্পোর্টস’কে বিষয়টি নিয়ে নিজেদের মতামত জানিয়েছেন তারা। কোড স্পোর্টসের বরাতে এ নিয়ে প্রতিবেদন করেছে ক্রিকেটবিষয়ক ওয়েবসাইট ক্রিকবাজ।

নাসুমের চড়কাণ্ড নিয়ে ৪৭ বছর বয়সী হেরাথ বলেছেন, ‘আমি সরাসরি বলতে পারি যে, এমন কিছুই ঘটেনি। বিশ্বকাপ চলাকালীন তাঁর আশেপাশে অনেক ক্যামেরা ছিল। মানুষ চাইলেই বলতে পারে যে, একটি ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু প্রমাণ তো থাকতে হবে। আমি দৃঢ়ভাবে বলছি, এরকম কিছুই ঘটেনি। কারণ আমি সেখানে ছিলাম। চড় মারা ও (পিঠে) ধাক্কা দেওয়া সম্পূর্ণ আলাদা ব্যাপার।’

একই ঘটনা নিয়ে ৫১ বছর বয়সী পোথাসের ভাষ্য, ‘আমি তাকে (হাথুরুসিংহে) ভালোভাবেই চিনি। তিনি খুবই অভিজ্ঞ আন্তর্জাতিক ও পেশাদার কোচ। যদি তিনি এরকম করতেন, তাহলে এই পর্যায়ে টিকে থাকতে পারতেন না।

আমি মনে করি, যারাই এমন অভিযোগ করেছেন, তাদের (হাথুরুর প্রতি) কিছুটা ক্ষোভ থাকতে পারে। আর যে (নাসুম) অভিযোগ করেছে, সে হয়তো ভাবেনি বিষয়টি এভাবে বিস্ফোরিত হবে।’

পোথাস আরও বলেন, ‘ এখন যা কিছু ঘটেছে, তাতে আমার মনে হয় না সে বুঝতে পেরেছে যে, সে কতটা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে এবং বাংলাদেশ অধ্যায়ের পর হাথুরুর জীবন কতটা কঠিন করে তুলেছে। খেলোয়াড়দের পিঠে চাপড় মারা সব সময়ই ঘটে। ভাষার ভিন্নতার কারণে, আপনাকে অনেক সময় হাতের ইশারার মাধ্যমে যোগাযোগ করতে হয়।’

২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ভরাডুবির কারণ অনুসন্ধান করতে পারফরম্যান্স মূল্যায়ন কমিটি গঠন করেছিল বিসিবি। সেখানে নাসুম আহমেদকে নাকি শারীরিকভাবে আঘাত করেছিলেন সেই সময়ের কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। নাজমুল হাসান পাপন সভাপতি থাকার সময় মূল্যায়ন কমিটির প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এমন কোন ঘটনা খুঁজে পায়নি বিসিবি।

গত বছর ৫ অগাস্টের পালাবদলের পর বিসিবি সভাপতি হন ফারুক। তিনি এর আগে হাথুরুসিংহের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত বিরোধের জেরেও ছিলেন সোচ্চার। ফারুক আহমেদের নেতৃত্বাধীন বিসিবিরও মনে হয়েছিল, বিশ্বকাপের সময় নাসুমকে থাপ্পড় মেরেছিলেন হাথুরুসিংহে। তাই অসদাচরণ ও চাকরিবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে চুক্তির মেয়াদ ফুরানোর পাঁচ মাস আগেই হাথুরুসিংহেকে ছাঁটাই করে বিসিবি।

বরখাস্ত হওয়ার কয়েকদিন পর অস্ট্রেলিয়ায় পরিবারের কাছে ফিরে যান তিনি। যদিও হাথুরু আদৌ নাসুমকে থাপ্পড় মেরেছিলেন কি না, সেটার সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ৫৬ বছর বয়সী এই কোচের পক্ষে–বিপক্ষেও কাউকে কথা বলতে শোনা যায়নি। সেই বিশ্বকাপে সহ-অধিনায়ক থাকা নাজমুল হোসেন শান্ত এমন কোন ঘটনা জানেন না বলে গণমাধ্যমকে বলেছিলেন।

কোড স্পোর্টসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হাথুরুসিংহে নিজেও তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ আবারও অস্বীকার করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, মাঠে ব্যাটসম্যানদের গ্লাভস পাঠানোর জন্য ডাগআউটে তাঁর পেছনে বসে থাকা নাসুমের পিঠে শুধু টোকা দিয়েছিলেন, ‘আমি কখনোই কোনো খেলোয়াড়ের সঙ্গে ঝগড়া করিনি।

খেলোয়াড়দের প্রতি আবেগও দেখাইনি। হতাশা থেকে হয়তো আমি ডাস্টবিন ছুঁড়ে ফেলেছি। যেকোনো কোচের ক্ষেত্রেই এমনটা হয়ে থাকে। কিন্তু যা হয়েছে, তার থেকে এটা একেবারেই আলাদা। এটা আমার ওপর চাপ সৃষ্টি করছে।’

বরখাস্ত হওয়ার কারণ হিসেবে সরাসরি বিসিবির বর্তমান সভাপতি ফারুক আহমেদের দিকে আঙুল তুলেছেন হাথুরুসিংহে, ‘জানি না অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত আমি কত সুযোগ মিস করেছি। তারা শুধু আমার চুক্তি বাতিল করার চেষ্টা করেছে। এটা নতুন সভাপতির (ফারুক আহমেদ) পূর্বপরিকল্পিত সিদ্ধান্ত ছিল।’

আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে বিসিবি তার ক্যারিয়ার শেষ করে দিয়েছে বলেও দাবি করেছেন দুই মেয়াদে প্রায় ৬ বছর বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব পালন করা হাথুরুসিংহে, ‘ক্রিকেটই আমার সবকিছু। কারণ এটাই আমার ক্যারিয়ার। তারা আমাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে উল্টো অভিযোগ এনে আমার ক্যারিয়ার ধ্বংস করে দিয়েছে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *