সর্বশেষ

নটিংহ্যাম থেকে লাহোর: সিকান্দার রাজার ২৪ ঘণ্টার রূপকথা

দুপুরে ইংল্যান্ডে টেস্ট ম্যাচ, পরেরদিন রাতে লাহোরে পিএসএলের ফাইনাল। রূপকথা নয়—সিকান্দার রাজার জীবনের বাস্তব গল্প। ক্রিকেটের পেশাদার জীবনে এমন নাটকীয়তা অনেকবার দেখা গেছে, কিন্তু রাজার সর্বশেষ অভিযান এক অনন্য অধ্যায় হয়ে থাকবে পাকিস্তান সুপার লিগের ও ক্রিকেটের ইতিহাসে।

নাটকের সূচনা: ইংল্যান্ডে টেস্ট, মাথায় পিএসএল

নটিংহ্যাম থেকে লাহোর: সিকান্দার রাজার ২৪ ঘণ্টার রূপকথা
তৃতীয়বারের মতো লাহোরের পিএসএল শিরোপা জয়
শনিবার সন্ধ্যায় ট্রেন্ট ব্রিজে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে ব্যাট করছিলেন রাজা। ইনিংসে হার—দলে হতাশা। কিন্তু বাকিরা হোটেলে ফিরলেও রাজা তখন ব্যস্ত আরেক যুদ্ধের প্রস্তুতিতে। পিএসএলের ফাইনালে লাহোর কালান্দার্সের হয়ে খেলার প্রতিশ্রুতি রেখেছেন তিনি। সেই প্রতিশ্রুতি পূরণে শুরু হয় ২৪ ঘণ্টার অবিশ্বাস্য ভ্রমণ।

ভ্রমণের মহাকাব্য: রাতের ডিনার বার্মিংহামে, সকালের নাশতা দুবাইয়ে

ট্রেন্ট ব্রিজ থেকে সরাসরি গাড়ি করে রাজা ছুটে যান বার্মিংহামের এয়ারপোর্টে। বিজনেস ক্লাস নেই—তা নিয়েও দুঃখ নেই তার। ইকোনমি ক্লাসেই উড়াল দেন দুবাইয়ের পথে। সেখান থেকে গাড়িতে আবুধাবি, এরপর আবার ফ্লাইট লাহোর। যখন কালান্দার্স অধিনায়ক শাহীন আফ্রিদি টস করছেন, তখনো রাজা বিমানবন্দর থেকে মাঠে আসার পথে!

মাঠে নামেই বাজিমাত

বল হাতে প্রথম ওভারেই বড় উইকেট—রাইলি রুশো। কিন্তু মূল নাটক জমে ওঠে ব্যাট হাতে। ২০ বলে দরকার ৫৭ রান, বোলিংয়ে মোহাম্মদ আমির। তখন ক্রিজে নতুন আসা রাজা। প্রথম বলেই মিড উইকেটে চার, পরের বলেই ছক্কা। চাপের মুহূর্তে খেলেন একের পর এক শট, যেন তিনি ক্লান্ত নন, বরং ভাগ্য তার জন্যই অপেক্ষায় ছিল।

শেষ ওভারে দরকার ৮ রান ৩ বলে। ফাহিম আশরাফের নিখুঁত ইয়র্কারও রুখে দিয়ে রাজা বল তুলে দেন কভারের ওপর দিয়ে ছক্কায়। পরের বলেই চার—জয় নিশ্চিত।

ম্যাচ শেষে রাজার উপলব্ধি, ‘আমি আসলে ফাঁকা ছিলাম। ভাবিনি কিছু, শুধু বলটা দেখেছি এবং খেলেছি,’ বলেন রাজা।

‘বোলিং করেছি ২৫ ওভার, ব্যাটিং ২০ ওভার, ডিনার খেয়েছি বার্মিংহামে, নাশতা দুবাইয়ে, লাঞ্চ আবুধাবিতে, আবার রাতের খাবার পাকিস্তানে। এটা পেশাদার ক্রিকেটারের জীবন। কৃতজ্ঞ আমি।’

শুধু জয় নয়, ইতিহাস

দুই বছর আগে শেষ বলে ফাইনাল জেতা কালান্দার্স এবার আরেক নাটকীয় জয় পেল। তবে এবারের জয়টা বিশেষ। রাজা বলেন, ‘এই ম্যাচটা বেছে নেব কারণ এর পেছনের গল্পটাই আলাদা। এত নাটক, এত আবেগ—শব্দ হারিয়ে যায়।’

সিকান্দার রাজার এই অধ্যায় প্রমাণ করে, পেশাদারিত্ব মানে শুধু পারফরম্যান্স নয়—এটা হলো দায়বদ্ধতা, হৃদয় আর সতীর্থদের প্রতি ভালোবাসা। লাহোর কালান্দার্সের জয়ের গল্প যতটা রানের, ততটাই মানুষের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *