নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ ক্রিকেটে যেন এক অদৃশ্য ঝড় বইছে। বিসিবির অভ্যন্তরে হঠাৎ করেই শোনা যাচ্ছে এক অভাবনীয় পরিবর্তনের গুঞ্জন—সরকার নাকি বর্তমান বোর্ড সভাপতি ফারুক আহমেদকে সরিয়ে তার স্থলে বসাতে চায় সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে। তবে এই বদলের পথ মোটেও মসৃণ নয়, বরং তা দেশের ক্রিকেটের গায়ে টানতে পারে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কালো ছায়া।
ফারুক আহমেদ নিজেই বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন। তার ভাষায়, “কোনো কারণ না জেনে আমি পদত্যাগ করব না।” শুধু কথায় নয়, তার অবস্থানও শক্ত। কারণ, তিনি কেবল এনএসসি মনোনীত নন, বিসিবির নির্বাচিত সভাপতি। অর্থাৎ, বোর্ড পরিচালকদের ভোটে তিনি বৈধভাবে এ পদে এসেছেন। ফলে তাকে সরানো মানে হবে নিয়মের বাইরে যাওয়া, আর সেই পথেই লুকিয়ে আছে ভয়ঙ্কর পরিণতি।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) বরাবরই রাজনৈতিক হস্তক্ষেপকে কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করে এসেছে। আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী, একটি ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালনা হতে হবে স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে। যেকোনো ধরনের সরকারি চাপ বা জবরদস্তিমূলক পরিবর্তনকে আইসিসি দেখে নিয়ম লঙ্ঘনের চোখে।
এই নিয়ম ভেঙে ২০২৩ সালে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ডে সরকারের হস্তক্ষেপের কারণে আইসিসি তাদের সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করেছিল। একই কারণে এর আগে নিষেধাজ্ঞা পেয়েছে জিম্বাবুয়ে, কেনিয়া, নেপালসহ আরও কয়েকটি দেশ। এবার সেই তালিকায় কি বাংলাদেশও যুক্ত হতে যাচ্ছে?
বিশেষজ্ঞদের মতে, বোর্ডে যদি জোর করে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করা হয়, তাহলে বাংলাদেশের জাতীয় দল আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা থেকে নিষিদ্ধ হতে পারে। বন্ধ হয়ে যেতে পারে আইসিসির অনুদান, সম্প্রচার স্বত্ব আর অন্যান্য বাণিজ্যিক সুবিধাও। এর ধাক্কা শুধু ক্রিকেটারদের ক্যারিয়ারেই নয়, দেশের ক্রিকেট অর্থনীতিতেও লাগবে সজোরে।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় শক্তি এর ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা ও তরুণ প্রতিভা। সেই সম্ভাবনার মুখে এই ধরনের অনিশ্চয়তা যেন এক বোমার ঘড়ি—যে কোনো মুহূর্তে বিস্ফোরিত হতে পারে।
এখন সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার। ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের বাইরে গিয়ে প্রয়োজন নিয়ম, প্রক্রিয়া এবং আন্তর্জাতিক মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধা। নইলে এক সময় যে স্বপ্ন ছিল বিশ্বজয়, তা হারিয়ে যেতে পারে নিষেধাজ্ঞার আঁধারে।
ক্রিকেট শুধু একটি খেলা নয়, এটি আজ বাংলাদেশের আত্মপরিচয়ের অংশ। সেই পরিচয় যেন ঝুঁকিতে না পড়ে—এই প্রার্থনাই এখন কোটি ভক্তের কণ্ঠে।