সর্বশেষ

নিরাপত্তাকর্মী থেকে এখন বিসিএস ক্যাডার

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার দালালীপাড়া গ্রামের ছকিয়ত আলী ও জেলেখা বেগম দম্পতির ছেলে জিয়াউর রহমান। তিন ভাই-বোনের মধ্যে তিনি বড়। ৪১তম বিসিএস পরীক্ষায় শিক্ষা ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়েছেন তিনি। এক সময় যার দু’বেলা খাবার জুটতো না, জরাজীর্ণ ঘরে গরু-ছাগলের সঙ্গে যাকে রাত কাটাতে হতো সেই জিয়াউর রহমান এখন বিসিএস ক্যাডার। অদম্য ইচ্ছা আর পরিশ্রম কাজে লাগিয়ে অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন তিনি।

জানা গেছে, ২০১২ সালে নতুন অনন্তপুর দাখিল মাদরাসা থেকে দাখিল পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পান জিয়াউর রহমান। তারপর অভাব অনটনে আলিম পড়ার মতো কোনো নিশ্চয়তা ছিল না। পরে টাইলস মিস্ত্রি, ফাস্টফুডের কর্মচারী ও আকিজ বিড়ি কারখানায় কাজ করে পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন তিনি। পড়াশোনার ফাঁকে অন্যের জমিতে কাজ করে সংসারে সহযোগিতা করতে হতো। শেষে ২০১৪ সালে আলিম পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ-৪.৬৭ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।

জিয়াউর রহমান বলেন, স্বপ্ন ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার, কিন্তু ভর্তি প্রস্তুতির কোচিং করার টাকা ছিল না। তাই ঢাকায় গিয়ে একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি শুরু করি। সারাদিন পরিশ্রমের পর বাসায় ফিরে পড়ার তেমন কোনো সুযোগ ছিল না। যার ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাইনি। পরে মিরপুর বাঙলা কলেজে সুযোগ পেলেও অর্থের কারণে পড়া হয় নাই।

তিনি আরও বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ না পেয়ে পরে ভর্তি হই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে। সেখানে থাকা, খাওয়া ও হাতখরচের টাকার জন্য খণ্ডকালীন একটি কাজ নিই। পরে একটি প্রতিষ্ঠান থেকে দুই বছর বৃত্তি পাই। পরবর্তীতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্সে সিজিপিএ ৩.৪১ পেয়ে উত্তীর্ণ হই।

পরে করোনা মহামারি শুরু হলে আবার আর্থিক সংকটে পড়ি। শেষে বন্ধু-বান্ধবের সহযোগিতায় ও টাইলস মিস্ত্রির কাজ করে বিসিএসের প্রস্তুতি নিই। অবশেষে কপালে জুটে যায় শিক্ষা ক্যাডার। বিসিএসের রেজাল্ট যেদিন প্রকাশ হয় সেদিন শিক্ষা ক্যাডারে নিজের রোলটি দেখে চোখে পানি চলে এসেছিল।

ছেলের বিসিএস ক্যাডার হওয়ার বিষয়ে জিয়াউর রহমানের মা মোছা. জেলেখা বেগম বলেন, আমরা তাকে কিছু দিতে পারি নাই। আজ ছেলের ভালো খবরে আমরা সবাই খুশি। আমার ছেলের জন্য সবার কাছে দোয়া চাই। সে যেন একজন ভালো মানুষ হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *