সর্বশেষ

নাহিদ রানার থেকেও আরও ভয়ংকর বোলিং খুঁজে পেল বাংলাদেশ

ভুল বোঝার আগে পুরোটা শুনুন। জাতীয় লিগে এখনো একটি করে ম্যাচ বাকি মোট আটটি দলের। সিলেট বিভাগ এক ম্যাচ হাতে রেখে এরই মধ্যে চ্যাম্পিয়ন। বিসিবির দুই নির্বাচক আবদুর রাজ্জাক ও হান্নান সরকার বিভিন্ন জেলায় ঘুরে ঘুরে জাতীয় লিগের এসব ম্যাচ দেখছেন। এর পাশাপাশি তাঁরা একটি কাজও করছেন।

দেশের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের এ লিগে কোন দল কেমন করছে, কোন খেলোয়াড় কেমন করছেন—সেসব নিয়ে বিসিবির ভেরিফাইড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্লাটফর্মে বিশ্লেষণ করছেন। নিয়মিত এই অনুষ্ঠানটির নাম ‘সিলেক্টরস পয়েন্ট’। তারই ষষ্ঠ পর্বে নির্বাচকদের মুখে উঠে এল মেহেদী হাসানের নাম।

মেহেদী! বলতে পারেন, এ আবার কোন মেহেদী? দেশের ক্রিকেটে এমনিতেই তো মেহেদীর অভাব নেই। এই মুহূর্তে ওয়েস্ট ইন্ডিজে টেস্ট দলের নেতৃত্বে মেহেদী হাসান মিরাজ। জাতীয় দলের আশপাশে ঘোরাফেরা করেন কিংবা আসা–যাওয়ার মধ্যে থাকেন আরেক মেহেদী—শেখ মেহেদী হাসান। সেই মেহেদী ও এই মেহেদী—দুজনেই আবার স্পিন অলরাউন্ডার। মেহেদীর এখানেই শেষ নয়। মেহেদী হাসান রানাও আছেন।

চাঁদপুর থেকে উঠে আসা ২৭ বছর বয়সী এ পেসার বিপিএল ও ঘরোয়া ক্রিকেটের পরিচিত মুখ। টাঙ্গাইলের মেহেদী মারুফকেও ভুললে চলবে না। ৩৬ বছর বয়সী এ ব্যাটসম্যানও ঘরোয়া ক্রিকেটের পরিচিত মুখ। আবার এবারের জাতীয় লিগে ঢাকা মেট্রোপলিটনে খেলা মোহাম্মদ মেহেদী হাসান নামে কুমিল্লার এক ডানহাতি পেসারও আছেন। প্রশ্ন হলো, রাজ্জাক–হান্নান মিলে যে মেহেদীর কথা বললেন, তিনি কোন মেহেদী?

এক কথায় ‘ব্যাট ভাঙা মেহেদী’। আরেকটু খোলাসা করে বললে, ব্যাটের কানা ভেঙে স্টাম্পের বেলস ফেলে দেওয়া কুড়িগ্রামের পেসার মেহেদী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর আরও একটি নাম ভাসে— ‘চিলমারী এক্সপ্রেস’।

রংপুর বিভাগের হয়ে এবারই জাতীয় লিগে অভিষেক ২৩ বছর বয়সী এই মেহেদীর। কক্সবাজার আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে গত মঙ্গলবার শেষ হওয়া ঢাকা মেট্রো–রংপুর ম্যাচে মেহেদীর অভিষেক। ড্র হওয়া সেই ম্যাচে মেহেদী ঢাকা মেট্রোর প্রথম ইনিংসে ২১ ওভারে ৪ মেডেন নিয়ে ৭১ রানে ১ উইকেট নেন। তবে পরের ইনিংসেই দেখা দেন ভিন্নরূপে। মেহেদীর ১৪ ওভার ৪ মেডেন ২৫ রানে ৭ উইকেটের বিধ্বংসী বোলিংয়ে মাত্র ১১৮ রানে গুটিয়ে যায় ঢাকা মেট্রোর দ্বিতীয় ইনিংস। অর্থাৎ প্রথম শ্রেণির অভিষেক ম্যাচেই মেহেদীর শিকার ৮ উইকেট।

জাতীয় লিগে হয়তো এর চেয়ে ভালো অভিষেকের নজির আছে। তবে দুই নির্বাচক মেহেদীর একটি বিষয় খেয়াল করেছেন। কক্সবাজার স্টেডিয়ামের উইকেট পুরোপুরি ব্যাটিংবান্ধব। সেখানে ৮ উইকেট নেওয়া চাট্টিখানি কথা নয়! পাশাপাশি গতিও বেশ ভালো। আরও একটি বিষয়—উচ্চতা।

মেহেদীর আরও একটি জিনিস আমার ভালো লেগেছে, ওর উচ্চতা ভালো। আমরা পেস বোলারদের মধ্যে যেটা খুঁজি, ৬ ফুটের বেশি (যদি) হয়, তার দিকে আমাদের আলাদা একটা নজর চলে যায়।

বিসিবির নির্বাচক রাজ্জাকই প্রথমে তুললেন মেহেদীর কথা। ঢাকা মেট্রো অধিনায়ক মোহাম্মদ নাঈমের রান ফেরার প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে হান্নানকে রাজ্জাক বলেন, ‘ওখানে (কক্সবাজার) কিন্তু আরেকটি ব্যাপার হয়েছে, ওই ধরনের উইকেটে, ওটা কিন্তু নিখাদ ব্যাটিং উইকেট (হান্নানও সায় দেন), ওখানে কিন্তু আমাদের মেহেদী নামে একটা ছেলে আছে, ও কিন্তু ৭ উইকেট পেয়েছে।

যদিও (ঢাকা মেট্রোর) দ্বিতীয় ইনিংসে, কিন্তু তারপরও ওই উইকেটের (পিচ) মধ্যে ৭ উইকেট পাওয়া কিন্তু মোটেও হেলাফেলা করার বিষয় নয়। যদিও এ একদম নতুন। “র, ভেরি র” দেখে মনে হয়েছে, সে উঠে আসছে, আমার কাছে মনে হয়েছে।’

রাজ্জাক এরপর বলেন, ‘আমি আশা করব, ও যদি এভাবে ওর ধারাটা ধরে রাখতে পারে, অবশ্যই ও আমাদের প্রক্রিয়ার মধ্যে তাড়াতাড়িই চলে আসতে পারবে বলে আমি আশা করি।’ হান্নান এরপর যোগ করেন, ‘মেহেদীর আরও একটি জিনিস আমার ভালো লেগেছে, ওর উচ্চতা ভালো।

আমরা পেস বোলারদের মধ্যে যেটা খুঁজি, ৬ ফুটের বেশি (যদি) হয়, তার দিকে আমাদের আলাদা একটা নজর চলে যায়। তার অভিষেক ম্যাচ হিসেবে ৭ উইকেট পাওয়া যেমন তার জন্য প্রেরণার, তেমনি আমাদের জন্যও পাওয়ার (রাজ্জাকও হান্নানের কথায় সায় দেন)।’

হান্নান যোগ করেন, ‘উচ্চতা থাকলে, উইকেট নেওয়ার এমন ক্ষমতা থাকলে, যদি আমাদের প্রক্রিয়ার মধ্যে আনার সুযোগ থাকে, যদি আমরা এনে আরও ঘষামাজা করে আরও গতি বাড়াতে পারি, তাহলে আমাদের জন্য অবশ্যই পাওয়া হবে।’

মেহেদী দারুণ অভিষেকের পর গত বুধবার তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি পোস্ট করেন, ‘সম্মান দেয়ার মালিক আল্লাহ। আলহামদুলিল্লাহ। অভিষেক ম্যাচে ৮ উইকেট।’

এখন মেহেদীর এগিয়ে যাওয়ার পালা। এগোতে এগোতে মেহেদী যদি রাজ্জাক–হান্নানদের প্রক্রিয়ার মধ্যে চলে আসতে পারেন এবং নিজেকে আরও ক্ষুরধার করতে পারেন, সেটা অবশ্যই বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্যও বড় পাওয়া হবে। তখন বলা যাবে, আরেক মেহেদীকে পেল বাংলাদেশ!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *