সর্বশেষ

সন্দেহজনক বিপিএল : ৫ রানের ওয়াইড এবং ১১-১৫ রান

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) নিয়ে যে সন্দেহ ও বিতর্ক চলছে, তা মূলত স্পট ফিক্সিং বা ম্যাচ ফিক্সিংয়ের কারণে। এই ধরনের অভিযোগ প্রতিটি বিপিএল আসরের সঙ্গেই উঠে আসে, তবে এবারের বিপিএলটি একটু বেশি সন্দেহের মধ্যে রয়েছে, বিশেষত কিছু অস্বাভাবিক ঘটনার কারণে। বিশেষ করে ৫ রানের ওয়াইড বল এবং নির্দিষ্ট ওভারগুলোতে ১১-১৫ রান আসার বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ তৈরি হচ্ছে। এই ধরনের ঘটনা স্পট ফিক্সিংয়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করছেন অনেক ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ এবং সাবেক ক্রিকেটার।

ওয়াইড বলের প্রভাব:বিপিএলের কিছু ম্যাচে দেখা যাচ্ছে, বিশেষ করে লেগ স্টাম্পের বাইরে দিয়ে যাওয়া বিশাল ওয়াইড বল দেওয়া হচ্ছে, যা সাধারণত আশা করা যায় না। এই ধরনের ওয়াইড বল যদি ৪-৫ রান আনে, তখন তা সন্দেহের উদ্রেক করে। বিশেষ করে, যদি বলটি পিচের বাইরে চলে যায়, কিংবা এমনভাবে ওয়াইড হয় যে উইকেট কিপার তা ধরতে পারে না, তখন এর পেছনে কিছু অস্বাভাবিকতা থাকতে পারে। অনেক সময় এটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ার উদ্দেশ্যে করা হতে পারে, যাতে নির্দিষ্ট ওভারের জন্য বাজির নির্দিষ্ট রান কোটা পূরণ হয়।

স্পট ফিক্সিং এবং সন্দেহজনক ঘটনার বিশ্লেষণ:একাধিক ঘটনা যেমন ওয়াইড থেকে ৫ রান পাওয়ার পরিমাণ বেশি হতে দেখা যাচ্ছে। গত বিপিএলে ২৬টি ম্যাচের ১০টিতে ১৬টি ওয়াইড বাউন্ডারি হয়েছে, যা অনেকের কাছে অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে। এর মধ্যে কিছু ঘটনা সন্দেহজনকও মনে হচ্ছে, যেমন স্পিনারদের ওয়াইড দেওয়া বা থার্ডম্যান ও ফাইন লেগের অপ্রতুল কভারেজ।কিছু নির্দিষ্ট ওভারে ১১-১৫ রান আসা, যা ইচ্ছাকৃতভাবে পরিচালিত হতে পারে। একে স্পট ফিক্সিংয়ের উদ্দেশ্য হিসেবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে, যেখানে নির্দিষ্ট ওভারেই অতিরিক্ত রান দেওয়া হচ্ছে।ম্যাচের ফলাফলে প্রভাব না হলেও, সঠিক জায়গায় প্রভাব ফেলা:স্পট ফিক্সিংয়ের ক্ষেত্রে পুরো ম্যাচের ফলাফল প্রভাবিত না হলেও, এক বা একাধিক নির্দিষ্ট ওভারে সঠিক রান আসা নিশ্চিত করতে এই ধরনের কাজ করা হয়। সেই ওভারগুলোর শেষের দিকে অতিরিক্ত ওয়াইড বল বা নো বল দেওয়া হতে পারে। ফলে, ম্যাচের ফলাফল না বদলালেও কিছু নির্দিষ্ট উপায়ে অর্থনৈতিক লাভ হয়।

বোলারদের অবদান:স্পট ফিক্সিংয়ের ক্ষেত্রে সাধারণত বোলাররা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন, কারণ তাদের উপর নির্ভরশীল যে কোনো নির্দিষ্ট ওভারে বেশি রান দেয়ার জন্য। অন্যদিকে, বোলাররা অনেক সময় ‘নো বল’ বা ‘ওয়াইড’ দিয়ে তা সম্পন্ন করতে পারেন। এই কারণে সন্দেহ তৈরি হচ্ছে, বিশেষত বোলারের ভুলের অজুহাত হিসেবে এই ধরনের বল ধরা পড়ছে।

ফ্র্যাঞ্চাইজির সন্দেহ:কিছু দুর্বল ফ্র্যাঞ্চাইজির সাথে এই ধরনের কার্যক্রম জড়িত থাকতে পারে। এমন অভিযোগও উঠছে যে কিছু ফ্র্যাঞ্চাইজি খেলোয়াড়দের সাথে চুক্তি করে এবং তাদের মাধ্যমে স্পট ফিক্সিংয়ের মতো কাজ করানোর চেষ্টা করে থাকে। যে খেলোয়াড়রা ফ্র্যাঞ্চাইজি বা ঘরোয়া ক্রিকেটে আছেন, তাদের জন্য এটি একটি অর্থনৈতিক সুযোগ হতে পারে, বিশেষত তাদের ক্যারিয়ার অবসানের দিকে এগিয়ে গেলে।

খেলোয়াড়দের উদ্দেশ্য:ফিক্সিংয়ের জন্য কিছু খেলোয়াড়দের মধ্যে তেমন নৈতিক বাধা নেই। তাদের মতে, খারাপ খেলার মাধ্যমে তারা অনেক টাকা উপার্জন করতে পারেন। আর এই ধরনের কাজ করার মাধ্যমে তারা অনেক সময় খেলায় ভালো পারফরম্যান্সের থেকেও বেশি লাভবান হতে পারে। যেমন, কয়েকজন স্থানীয় বা বিদেশি ক্রিকেটার যাদের ক্যারিয়ার শেষের দিকে, তাদের মধ্যে এই ধরনের কাজের জন্য বড় পরিমাণ টাকা পাওয়ার চাহিদা থাকতে পারে।

ক্যারিয়ার শেষ হওয়া ক্রিকেটারদের ভূমিকা:অনেক খেলোয়াড়ের ক্যারিয়ার এখন আর জাতীয় দলে ফেরার সম্ভাবনা নেই। তাদের কিছু জায়গায় ভালো পারফর্ম না করলেও তারা বেশ কিছুটা অর্থ উপার্জন করতে পারেন। এসব ক্রিকেটাররা জানেন যে তাদের খারাপ খেলা বা সন্দেহজনক কাজগুলো প্রমাণিত না হলে তারা শাস্তি পাবেন না, আর এজন্য তাদের ওপর সন্দেহ বাড়ে।

উপসংহার:এবারের বিপিএল নিয়ে যে সন্দেহ ও অভিযোগ উঠছে, তা সরাসরি স্পট ফিক্সিং বা ম্যাচ ফিক্সিংয়ের দিকে ইঙ্গিত করছে। যদিও প্রমাণ পাওয়া কঠিন, তবে মাঠের অস্বাভাবিক ঘটনা এবং বোলিং, ব্যাটিংসহ অন্যান্য অসাধারণ ঘটনা স্পট ফিক্সিংয়ের ইঙ্গিত দেয়। এই অভিযোগগুলি বাংলাদেশের ক্রিকেটের উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে এবং এটি শুধু বিপিএলকে নয়, দেশের ক্রিকেটের সার্বিক পরিবেশকেও প্রশ্নের মুখে ফেলে দিতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *