নিজস্ব প্রতিবেদক: তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৭৭ রানে পরাজিত হয়েছে। ম্যাচের প্রথম ৮০ ওভার পর্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকলেও মাত্র ৩ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ হঠাৎ করেই ছিটকে পড়ে ম্যাচ থেকে। ম্যাচের মধ্য ভাগে এমন ভয়াবহ ধস দীর্ঘ সময় মনে রাখার মতো একটি অধ্যায় হয়ে থাকবে।
আসালাঙ্কার সেঞ্চুরি ও ইনিংস গড়ার গল্প
টস জিতে ফিল্ডিং নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং শুরু হয় চরম ব্যর্থতায়। ১১ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বিপর্যয়ের মুখে পড়ে স্বাগতিকরা। তবে সেই চাপের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ব্যাটিং করেন অধিনায়ক চারিথ আসালাঙ্কা। তিনি ১২৩ বলে ১০৬ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলে দলকে টেনে তোলেন। তার ইনিংসে ছিল ৬টি চারের সঙ্গে ৪টি বিশাল ছক্কা।
তাকে সঙ্গ দেন জনিথ লিয়ানাগে (২৯), মিলান রাথনায়েকে (২২), এবং ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা (২২)। শেষ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কা ৪৯.২ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে সংগ্রহ করে ২৪৪ রান।
বাংলাদেশের পক্ষে বল হাতে সবচেয়ে সফল ছিলেন তাসকিন আহমেদ, যিনি ৪৭ রানে ৪ উইকেট নেন। তানজিম হাসান সাকিব ৩টি এবং তানভির ইসলাম ও শান্ত ১টি করে উইকেট নেন।
ভালো শুরু, তারপর ভয়াবহ ধস
২৪৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ শুরুটা ভালোই করেছিল। ১৭ ওভার শেষে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ১০০ রান, উইকেট ছিল মাত্র ২টি। তখন মাঠে ছিলেন তানজিদ হাসান এবং শান্ত। তানজিদ খেলেন ৬১ বলে ৬২ রানের চমৎকার ইনিংস। কিন্তু এরপরই শুরু হয় বিপর্যয়।
মাত্র ৩ ওভারের ব্যবধানে (১৮.৩ থেকে ২০.৫ ওভার), বাংলাদেশ ৬টি উইকেট হারিয়ে ফেলে মাত্র ৫ রানের ব্যবধানে। টানা উইকেট পতনের ফলে ব্যাটিং অর্ডার ভেঙে পড়ে, এবং ইনিংসের গতিপথ একেবারেই পাল্টে যায়।
এক পর্যায়ে স্কোর দাঁড়ায় ১০৫/৮। কিছুটা লড়াই করেন জাকের আলী, যিনি ৬৪ বলে ৫১ রান করেন। কিন্তু তার ইনিংসও বড় পার্থক্য গড়তে পারেনি। বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত ৩৫.৫ ওভারে ১৬৭ রানে অলআউট হয়ে যায়।
শ্রীলঙ্কার বোলিং আক্রমণ ছিল দুর্দান্ত
ম্যাচে শ্রীলঙ্কার স্পিন আক্রমণ ছিল চোখে পড়ার মতো। হাসারাঙ্গা ৭.৫ ওভারে মাত্র ১০ রানে ৪ উইকেট নিয়ে মূল ধস নামান। কামিন্দু মেন্ডিস ৫ ওভারে ১৯ রানে তুলে নেন ৩ উইকেট। পাশাপাশি থিকশানা, আসিথা ও আসালাঙ্কা বাকি উইকেট শেয়ার করেন।
ম্যাচ শেষে যা বললেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মেহেদি হাসান মিরাজ
ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন:
“টসটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। উইকেট ভালো ছিল এবং আমরা ভালো বোলিং করেছি, বিশেষ করে পেসাররা শুরুতে উইকেট নিয়েছে। মাঝের ওভারে আমরা উইকেট তুলতে পারিনি। আসালাঙ্কা যেভাবে ব্যাট করেছে, সেটা অসাধারণ ছিল। যদি আমরা মিডল ওভারে উইকেট পেতাম, তাহলে ম্যাচে ফিরে আসা যেত। গরমের কারণে দুই বোলার (মুস্তাফিজ ও তানভির) ক্র্যাম্পে ভুগেছে। প্রথম ৪০ ওভার আমরা ভালো খেলেছি। শান্ত আর তানজিদ ভালো শুরু দিয়েছিল, কিন্তু মিডল অর্ডার ব্যাটাররা ভালো খেলতে পারেনি। টানা উইকেট হারানোই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে।”
সংক্ষিপ্ত স্কোরকার্ড
শ্রীলঙ্কা: ২৪৪/১০ (৪৯.২ ওভার)
চারিথ আসালাঙ্কা ১০৬, কুশল মেন্ডিস ৪৫
তাসকিন আহমেদ ৪/৪৭, তানজিম হাসান ৩/৪৫
বাংলাদেশ: ১৬৭/১০ (৩৫.৫ ওভার)
তানজিদ হাসান ৬২, জাকের আলী ৫১
হাসারাঙ্গা ৪/১০, কামিন্দু মেন্ডিস ৩/১৯
ফলাফল: শ্রীলঙ্কা জয়ী ৭৭ রানে
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: চারিথ আসালাঙ্কা
সিরিজের পরবর্তী ম্যাচ
তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে ৫ জুলাই, একই ভেন্যুতে। সিরিজে টিকে থাকতে হলে পরবর্তী ম্যাচে জয় ছাড়া কোনো বিকল্প নেই বাংলাদেশের।