সর্বশেষ

‘হৃদয়’ কাড়বে হৃদয়, বিশ্বাসটা ছিল সিলেট কোচের

এবারের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগটা (বিপিএল) স্বপ্নের মতো কাটছে সিলেট স্ট্রাইকার্সের ব্যাটার তৌহিদ হৃদয়ের। টানা তিন ম্যাচে ফিফটি করেছিলেন। এরপর যদিও আঙুলের চোটে থেমে যেতে হয়েছিল, তবে যেখানে থেমেছিলেন সেখান থেকেই আবার শুরু করলেন যেন। সিলেটের এই ব্যাটার এখন পর্যন্ত মাঠে নেমেছেন ৮ ইনিংসে।




যার মধ্যে অর্ধ-শতক হাঁকিয়েছেন ৫ ইনিংসেই। আসরে ১৪৯ বেশি স্ট্রাইকরেটে ব্যাট করে ৩৭৩ রান নিয়ে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় সবার ওপরে এখন হৃদয়। সিলেট যেন ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’। দেশি কোচ আর অভিজ্ঞ মাশরাফির ছোঁয়ায় সাফল্যের চূড়ায় বিপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজিটি।

চলতি আসরের প্লে-অফও নিশ্চিত করেছে তারা। তাদের এমন সাফল্যের নেপথ্য কারিগরদের অন্যতম তরুণ ব্যাটার তৌহিদ হৃদয়। সিলেটের প্রধান কোচ রাজিন সালেহ জানিয়ে রাখলেন বিশ্বাস করেই তাকে দলে নিয়েছিলেন। ঢাকা পোস্টের সঙ্গে আলাপকালে তৌহিদ হৃদয় সম্পর্কে সিলেট কোচ বলেন, ‘দেখেন তৌহিদ হৃদয়কে যখন আমি দলে নেই চিন্তা করেই নিয়েছিলাম।




কেননা এর আগেও হৃদয়ের সঙ্গে আমি দুটি ট্যুরে ছিলাম। একটা ভারত আর একটা ওয়েস্ট ইন্ডিজে। সে ওই সফরে ভালো খেলেছিল। আমি জানতাম যে সে একটা ভালো রিদম বা টাচে আছে। ‘এ’ টিমের হয়ে যখন খেলছিল তখন সেখানে আন্তর্জাতিক মানের বোলার ছিল।

আমি বিশ্বাস করেছিলাম যে টি-টোয়েন্টিতে সে ভালো খেলবে।’ চলতি বিপিএলে যেমন পারফর্ম করছে, আসর শুরুর আগে এমন প্রত্যাশা ছিল কি না জানতে চাইলে রাজিন বলেন, ‘এমন আশাই করেছিলাম ভালো খেলবে, অবশ্যই ভালো খেলবে। কিন্তু তার উন্নতিটা যে এত তাড়াতাড়ি হবে এটা আশা করিনি। যে উন্নতি হয়েছে মাশাআল্লাহ। সিলেটে নেওয়ার পর তাকে আলাদাভাবে তেমন কিছু বলা হয়নি।




শুধু পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। সে না শুধু সব জুনিয়রদের স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। তবে একটা প্লান দেওয়া হয় সেভাবেই করে সবাই, যে তুমি তোমার মতো করে ক্রিকেট খেলবা। হৃদয় যেভাবে ক্রিকেট খেলতে চাচ্ছিল তাকে সেভাবেই আমরা ছেড়ে দিয়েছি। ওইভাবেই বানিয়ে দিয়েছি, সেভাবেই খেলো।’

বিপিএল বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের বড় লিগ। এখানে পারফর্ম করে জাতীয় দলে যদি সুযোগ না মেলে সেটি হৃদয়ের জন্য কি একটু দুঃখজনক হবে। রাজিনের মতে,’দুঃখজনক হবে কি না ঠিক জানি না। সে তো মাত্র শুরু করছে খেলা, তার আরও খেলা উচিত বিপিএল বা ডিপিএল লেভেলের আরও ভালো খেলুক। একটা খেলোয়াড় ৩/৪ টা ম্যাচ ভালো খেলার পরে তাকে আমরা জাতীয় দলে নিয়ে যাই তারপর সে আবার জাতীয় দলে গিয়ে স্ট্রাগল করে।




আমার মনে হয় আরও একটা অভিজ্ঞতা অর্জন করে যদি সে যায় তাহলে ভালো হবে। হৃদয়ের আরেকটু সময় নিয়ে যাওয়া ভালো আমি এটাতে নেগেটিভলি দেখি না পজিটিভলি দেখি। কারণ তার জন্য আরও ভালো খেলার ক্ষুধা থাকবে। নিজের খেলার উন্নতির চেষ্টা করবে। এতে সে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবে যাতে ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ভালো হবে।’ তরুণ ক্রিকেটারদের কাছে মাশরাফি বিন মুর্তজা নায়ক।

দলের ক্রিকেটাররা তার থেকে কিভাবে শিখছেন সে প্রসঙ্গে রাজিন বলেন, ‘কোচ মাঠে শিক্ষকের মতো কথা বলে কিন্তু ম্যাশ লিডারের মতো কথা বলে। লিডারের কাজই হলো দলকে চাঙা রাখা। খেলোয়াড়দের কিভাবে চাঙা করবে তার সেই ক্ষমতা অনেক আলহামদুলিল্লাহ।




আমি মনে করি বিশ্বের সেরা অধিনায়কদের মধ্যে মাশরাফি একজন শুধু বাংলাদেশ না। মাশরাফি মাঠে থাকা মানেই ভিন্ন কিছু। সে সবসময় জুনিয়রদের সঙ্গে কথা বলে আমার মতো। শান্ত, জাকির, হৃদয় সবাইকেই তাদের মতো শুরু করার ফ্রিডম মাশরাফিও দিয়ে থাকে। মূলত আমাদের দেশি ক্রিকেটাররা ভালো খেলছে বলে আমরা এই পর্যন্ত আসছি।’ সিলেট স্ট্রাইকার্স কি এখনই বিপিএলের চ্যাম্পিয়ন হওয়া নিয়ে চিন্তা করছে।

জবাবে দলটির প্রধান কোচ জানালেন, ‘আপাতত চ্যাম্পিয়ন নিয়ে ভাবছি না। মাত্র কোয়ালিফায়ার এখন সেমিফাইনালের চিন্তাও করিনি। লিগের ম্যাচও বাকি। চ্যাম্পিয়ন বা ফাইনাল এগুলো আসলে ভাগ্যের ব্যাপারও।’ এছাড়া তৌহিদ হৃদয়কে নিয়ে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা বলেছেন সিলেট স্ট্রাইকার্সের ব্যাটিং কোচ তুষার ইমরান। বলছিলেন, ‘আসলে দেখেন তৌহিদ হৃদয়ের গেল বিপিএল থেকে এবার কিন্তু ভিন্ন খেলছে। এত আশা ছিল না সে যেমন খেলছে।




মূলত এইচপির যারা কোচ ছিল তারা তাকে নিয়ে অনেক কাজ করেছে। আমরা তো আসলে বেশি দিন পাইনি। অনুশীলনে যতটুকু পাই শেখানোর চেষ্টা করি খেলার ধারণাটা দিতে পারি।’ গেল আসরের থেকে এবারের আসরে হৃদয় ভিন্ন ভাবে খেলছে জানিয়ে তুষার বলেন, ‘গেল বিপিএল থেকে এবারের বিপিএলে সে পরিবর্তন এনেছে। কেননা সেবার এমন আক্রমণাত্মক খেলেনি সে।

তবে এখন হৃদয় স্ট্রাইকরেট বাড়ানো নিয়ে মনোযোগী যতক্ষণই থাকে ভালো করার চেষ্টা করে। পরিস্থিতি যেমন চায় বল বুঝে সে সেভাবে খেলতে পছন্দ করে। পরিবর্তন আসছে ব্যাট লিফট বলেন, স্ট্যামস বলেন। পাওয়ার হিটিং খেলতে গেলে যা যা প্রয়োজন তার সবই আনার চেষ্টা করছে সে।’ হৃদয়ের যে পারফরম্যান্স আসন্ন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে দলে ডাক পাবেন কি না। তুষার বলেন, ‘যারা পারফর্ম করবে তারা সুযোগ পাবে এটাই নিয়ম।




এছাড়া হৃদয়ের প্রতি বোর্ডের আলাদা একটা নজর আছে আমার মনে হয়। এজন্যই কিন্তু গেল বছর বিপিএল ভালো না খেললেও এইচপি বলেন ‘এ’ দল বলেন সব জায়গায় বোর্ড তাকে রাখত। এই সুযোগটা সে কাজে লাগিয়েছে এবং অনুশীলনে সে তার দুর্বলতা নিয়ে কাজ করেছে।’ সিলেটের আরেক ক্রিকেটার নাজমুল হোসেন শান্ত যাকে নিয়ে সমালোচনা সবসময়। তবে চলমান বিপিএলে শান্ত চলেছেন দুর্বার গতিতে।

তার পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করতে গিয়ে সিলেটের ব্যাটিং কোচ বললেন, ‘একজনকে আসলে সুযোগ দিতে হবে। দুই-তিনটা ম্যাচ খেলিয়ে যাছাই করতে পারবেন না। আর শান্ত তো এমন না যে রান করছে না সে কিন্তু দুই ম্যাচ ভালো করে একটা খারাপ করে। একটা ভালো করলে দুইটা ম্যাচ খারাপ হয়। কিন্তু ধারাবাহিকতার অভাব ছিল ধীরে ধীরে হয়তো অভিজ্ঞ হলে তাহলে এগুলো কাটিয়ে উঠবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *