সর্বশেষ

চাকরির পিছনে না ছুটে ৩০ প্রজাতির ফল বাগানে তাক লাগালেন ঠাকুরগাঁওয়ের সিদ্দিক

ছোটবেলা থেকেই গাছের সঙ্গে সখ্য আবু বক্কর সিদ্দিকের। গাছ আর বাগান ছিল তার বন্ধু। পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের বাগানে সময় পার করতেন সিদ্দিক। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চাপ বাড়তে থাকে পড়াশোনার। বাড়ি থেকে পড়াশোনার জন্য চলে যেতে হয় দূরে। তবে এই চাপ আর দূরত্ব গাছ থেকে দূরে রাখতে পারেনি তাকে।




পড়াশোনা শেষ করে বাড়িতে এসে ৩০ প্রজাতির ফল বাগান করেছেন সিদ্দিক। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের লধাবাড়ি গ্রামের আমিনুর রহমানের ছেলে আবু বক্কর সিদ্দিক। বাড়ির পাশে ভাউলারহাট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ম্যানেজম্যান্ট বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন তিনি। বর্তমানে বিসিএসের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

বাগান করে সফল উদ্যোক্তা হওয়ার পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করেছেন অনেক বেকার যুবকের। সিদ্দিকের এমন উদ্যোগ সফল হওয়ায় সাড়া ফেলেছে জেলাজুড়ে।




বাগান দেখতে আসা সিদ্দিকের বন্ধু সুবল রায় বলেন,পড়াশোনার সুবাদে আমি ঢাকায় থাকছি। আজকে তার বাগানে প্রথম এলাম। বাগানটি দেখার পর আমি অভিভূত হয়েছি। বরই, ত্বীন, আপেল, দার্জিলিং কমলাসহ নানা ধরনের গাছ নিয়ে তার বাগান। সবচেয়ে বড় বিষয় হল প্রায় সবগুলোতে ভালো ফলন হয়েছে। এটি আসলে আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। তার জন্য সব সময় শুভ কামনা থাকবে।

চারা কিনতে আসা হুমায়ুন আহমেদ বলেন, আমি সিদ্দিক ভাইয়ের কাছে কমলা, লেবু ও বরইয়ের চারা নিতে এসেছি। এর আগেও কয়েকবার আমি এ বাগানে এসেছি। দেখে আমার খুব ভালো লেগেছে। আমিও অনুপ্রাণিত হয়ে বাগান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সেজন্য ভালো জাতের চারার জন্য এসেছি। সেই সঙ্গে কীভাবে চারাগুলোর যত্ন নেব তা জেনে নিচ্ছি। স্থানীয় স্কুলশিক্ষক আসাদুজ্জামান বলেন, সিদ্দিকের এমন উদ্যোগ আসলে প্রশংসনীয়।




এটি এলাকায় একটি চমক সৃষ্টি করেছে। পড়াশোনার পাশাপাশি মিশ্র ফল বাগান থেকে সে ভালো আয় করছে। সেই সঙ্গে স্থানীয় অনেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছে। বাগানে কাজ করা নিন্দালু বলেন, আমি বাগানের শুরু থেকে আছি। চারার যত্ন নেওয়া, কলম কাটা, আগাছা পরিষ্কার করা, পানি দেওয়ার কাজগুলো করি।

আমাকে মাসিক বেতন দেওয়া হয়। সেটা দিয়ে আমার খরচ চলে। পাশাপাশি পরিবারকে সহযোগিতা করে থাকি। আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ছোটবেলা থেকে গাছ ভালো লাগতো। শখ ছিল একটা বড় বাগান করব। গ্রাম থেকে শহরে গিয়ে দেখি মানুষ ছাদেও বাগান করছে। এতে করে আমার আগ্রহ আরও বেড়ে যায়। আমি পড়াশোনার পাশাপাশি অবসর সময়কে কাজে লাগিয়ে বাগানের কাজ শুরু করি।




আট মাস যেতে না যেতেই আমি লক্ষাধিক টাকা আয় করেছি। আগামী রমজান মাসে চার লাখ পিস লেবু বিক্রি করব বলে আশা করছি। পাশাপাশি আমার বাগানে ত্বীন ফল,কমলা, বরই, ড্রাগন, সজনা, আপেল, লেবুসহ ৩০ প্রজাতির ফলের গাছ রয়েছে। যেগুলোর মধ্যে কিছু গাছের ফল আমি ইতোমধ্যে বিক্রি শুরু করেছি।

আরও কিছু এখন বিক্রি করা হচ্ছে। কিছু গাছের ফল এক মাসের মধ্যে চলে আসবে বলে আশা করিছি। তিনি বলেন, যেহেতু বাবার জায়গা ছিল আর গাছের সঙ্গে সখ্য ছিল, সেটার জন্যই বাগান করা। পড়াশোনা আমার থেমে নেই। আমি এখন বিসিএসের প্রস্তুতি নিচ্ছি।




এই বাগানের মাধ্যমে অনেকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পেরেছি। অনেকেই আসছেন চারা নিতে। বিভিন্নভাবে পরামর্শ দিচ্ছি। আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, আমরা সবাই চাকরি নিয়ে পড়ে থাকলে সফল হতে পারব না। পড়াশোনার পাশাপাশি কিছু করার উদ্যোগ নিয়ে শুরু করলেই সফল হওয়া। আমিও দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে চারা নিয়ে এসে এ বাগানটি করেছি। কেউ যদি বাগান করতে আগ্রহী হয়ে থাকে অবশ্যই তাকে আমি সহযোগিতা করব।

আমি আরও জায়গা প্রস্তুত করছি বাগানের পরিধি বাড়ানোর জন্য। এতে আমি আরও আয় বাড়ানোর পাশাপাশি অধিক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারবো। ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. আব্দুল আজিজ বলেন, অধিকাংশ শিক্ষার্থী চাকরি নিয়েই ব্যস্ত সময় পার করেন। তার মধ্যে একজন শিক্ষার্থীর এমন উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে তাকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *