জন্ম থেকেই দুই হাত ও ডান পা নেই তামান্নার। এভাবেই প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর উচ্চ শিক্ষার জন্য স্নাতকে ভর্তি হলেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি)। বুধবার যবিপ্রবির ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হয়েছেন তামান্না আক্তার নুরা। বিষয়টি নিশ্চিত করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন।
যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার আলীপুর গ্রামের রওশন আলী ও খাদিজা পারভীন শিল্পীর মেয়ে তামান্না নুরা। তিন ভাইবোনের মধ্যে তিনি বড়। জন্ম থেকেই তাঁর দুই হাত ও এক পা নেই।
শারীরিক এই প্রতিবন্ধকতা তাঁর সাফল্যের পথে কখনো বাধা হতে পারেনি। বাঁ পা লিখেই তিনি শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে পিএসসি, জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ অর্জন করেছিলেন। এরপর তামান্না যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন।
এ বিষয়ে তামান্না আক্তার নুরা বলেন, আমি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) মাইক্রোবায়োলজি বিষয়ে পড়তে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমার শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে উপাচার্য স্যারের পরামর্শে আমি ইংরেজিতে ভর্তি হই। আমি যখন নবম শ্রেণিতে ছিলাম তখন থেকেই ভিসি স্যার সর্বপ্রকার সাহায্য সহযোগিতার মাধ্যমে আমার পাশে ছিলেন এবং সবসময় উৎসাহ যুগিয়েছেন।
এ বিষয়ে যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘অণুজীব বিজ্ঞানে পড়তে হলে যথাযথ সতর্কতা মেনে প্রতিনিয়ত গবেষণাগারে কাজ করতে হয় যা তামান্নার জন্য কষ্টসাধ্য। আর অণুজীব বিজ্ঞানে হাতে কলমে ব্যবহারিক কাজ না করলে এ বিষয়ের কিছুই বোঝা যায় না।
এজন্য তার শারিরীক বিষয়টি বিবেচনা করে তাকে ইংরেজি বিভাগে পড়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তামান্না যেতে অতি মেধাবী শিক্ষার্থী, তাই সে ইংরেজি বিভাগে পড়লেও খুব ভালো করবে। তাছাড়া সে ফলাফল ভালো করলে বিশ্ববিদ্যালয়ও তাকে চাকরী দিতে পারবে।
আর তামান্নার আবাসনের জন্য নবনির্মিত বীরপ্রতীক তারামন বিবি হলে বিদেশী এবং পিএইচডি শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দকৃত অধিক সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন কক্ষ বরাদ্দ করা হবে যাতে তার হলে অবস্থান করে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে কোনো সমস্যা না হয়।
উল্লেখ্য, অদম্য মেধাবী তামান্নার এইচএসসিসহ সকল পরীক্ষার সাফল্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর বোন শেখ রেহানা ফোন করে খোঁজ-খবর নিয়েছিলেন।
একই সঙ্গে তামান্নার স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে আসেন তাঁরা। তাঁর চিকিৎসার জন্য ঢাকায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করানো হয়। সেখানে বার্ন ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেনের তত্ত্বাবধানে তাঁকে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করানো হয়।