অ্যাকোয়াপনিক্স মূলত মাছ ও সবজি চাষের একটি সমন্বিত পদ্ধতি। এ ক্ষেত্রে মাছের ময়লা তথা দূষিত পানি গাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং স্বচ্ছ পরিষ্কার পানি পুনরায় মাছের ট্যাংকে ফিরে আসে। এ পদ্ধতি বিশ্বব্যাপী একটি বহুল প্রচলিত বাস্তবসম্মত এবং দীর্ঘস্থায়ী খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থা যার ক্ষুদ্র ও বৃহৎ যে কোনো পরিসরে বাস্তবায়ন সম্ভব।
এতে মাছে ব্যাকটেরিয়া ও গাছ পুনঃসঞ্চালন প্রক্রিয়া তথা পদ্ধতিতে কাজ করে। এখানে লক্ষণীয় যে, এ পদ্ধতিতে মাটি ছাড়াই সবজি উৎপাদন করা যায় এবং আরও উল্লেখ্য যে, এ ক্ষেত্রে ব্যাকটেরিয়া পানির সমুদয় বর্জ্য ময়লা ইত্যাদি তাৎক্ষণিকভাবে দূরীভূত করে, যেভাবে প্রা’ণীর কিডনি ও লিভা’র এ কাজটি সম্পন্ন করে থাকে।একটি পাত্রে কিছু নুড়ি পাথর নিয়ে তাতে প্রয়োজনমতো সবজির চারা রোপণ করা যেতে পারে।
অ’তঃপর উক্ত পাত্রের মধ্যে অ্যাকোরিয়ামের পানি প্রবাহ সৃষ্টি করতে হবে, এটি ক্ষুদ্রায়তনের অ্যাকোয়াপনিক্সের উদাহ’রণ হিসেবে গৃহীত হতে পারে। অ’ভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আরও বড় পরিসরের অ্যাকোয়াপনিক্স তৈরি করা সম্ভব। এ প্রক্রিয়ায় মাছের খাদ্য, বিদ্যুৎ খরচও শ্রম তুলনামূলকভাবে খুবই কম লাগে। এ পদ্ধতিতে অধিক ঘনত্বের মাছের পুকুরের পানি একটি পাম্পের সাহায্যে সামান্য উঁচুতে অবস্থিত ট্যাংকে উত্তোলন করা হয় এবং সেই পানিই সবজি চাষের ট্রের
আকারে পুকুরে ফিরে আসে। এর ফলে সবজি প্রাপ্তির পাশাপাশি চাষকৃত পুকুরের পানি পরিশোধিত হয় এবং যথানিয়মে অক্সিজেনের পরিমাণও বৃদ্ধি পায়।১. প্রযু’ক্তিটি অ’তি সহ’জ হওয়ায় বা সামান্য প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এটি বাস্তবায়ন সম্ভব।২. অ্যাকোয়াপনিক্স একটি জৈব খাদ্য উৎপাদন পদ্ধতি। এর মাধ্যমে সুলভ উপাদান ব্যবহার করে উপাদেয় তথা পুষ্টিকর খাদ্য উৎপন্ন করা যেতে পারে।
৩. কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সবজি উৎপাদন সম্ভব।৪. সবজি উৎপাদনে স্বল্প পরিমাণ পানি দরকার হয়। এতে শুধু বাষ্পীভূত পানিটুকুই ব্যবহার করা হয়ে থাকে।৫. পলিথিন দিয়ে ঘর তৈরি করে তাতে সারা বছরই মাছ ও সবজি চাষ করা যায়।৬. এ পদ্ধতির জন্য তেলাপিয়া মাছই সর্বাধিক উপযোগী। কেননা, এ মাছ দ্রুত
বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়া, অধিক ঘনত্বেও চাষ করা সম্ভব।উপরন্তু, পানির গুণাগুণে কিছুটা হেরফের হলেও তেলাপিয়ার বৃদ্ধিতে কোনো তারতম্য হয় না। লক্ষ করা গেছে, ২০০০ লিটারের ট্যাংক থেকে ৮ মাসে ১০০-১২০ কেজি তেলাপিয়া উৎপাদন সম্ভব। এর সাথে বছরব্যাপী উল্লেখযোগ্য পরিমাণে টমেটো, লেটুস, কচু ও পুদিনা ইত্যাদি উৎপন্ন করা যায়।অ্যাকোয়াপনিক্স পদ্ধতিতে মাছ ও সবজির সমন্বিত চাষে মাটি ছাড়া স্বল্প পরিমাণ পানি ও জায়গার দরকার হয়।
এতে শাকসবজি ফলানোর জন্য অ’তিরিক্ত সারের কোনো আবশ্যকতা নেই। এ পদ্ধতিতে মাছ ও সবজির সমন্বিত চাষে খরা ও উপকূলীয় লবণাক্ত অঞ্চল যথার্থই সহায়ক। এ ক্ষেত্রে মাছের ট্যাংকের অ্যামোনিয়াসমৃদ্ধ পানি গাছের শিকড়ে অবস্থিত ব্যাকটেরিয়া ভেঙে গাছের খাদ্য উপযোগী নাইট্রেটে পরিণত করে এবং পানি দূষণমুক্ত করে পুনরায় মাছের ব্যবহার উপযোগী করে তোলে।
এ পদ্ধতিতে বাড়ির আঙিনা, ভবনের ছাদ ও বারান্দা থেকে অ’তি সহ’জেই টাট’কা শাকসবজি ও মাছ উৎপাদন সম্ভব।এ পদ্ধতিতে বাঁশের চটি দিয়ে মাচা তৈরি করা হয়। মাচাটি প্রতিটি আধা লিটার পানি ভর্তি চল্লিশটি বোতল দিয়ে ভাসিয়ে রাখতে হয়। অ’তঃপর বোতলের তলায় অনেক ছিদ্র করে তার মধ্যে নারিকেলের ছোবড়া ও নুড়ি পাথর স্তরে স্তরে সাজিয়ে তাতে সবজির চারা লাগিয়ে মাছের পুকুরে স্থাপন করতে হয়।
প্রতিটি মাচায় চারটি করে কচু, পুদিনা, কলমিশাক, ঢেঁড়স ও টমেটোর সর্বমোট ২০টি চারা ব্যবহার করা যায়। এ পদ্ধতিতে প্লাস্টিকের ড্রাম লম্বালম্বিভাবে কে’টে অর্ধেক করে নুড়ি পাথর ও মাটি স্তরে স্তরে সাজিয়ে কচু, পেঁপে ও বেগুনের চারা রোপণ করা হয়। এ ক্ষেত্রে মাছের ট্যাংকের ময়লা পানি পাম্প করে প্রতিদিন দুইবার ড্রামের নুড়ি পাথরের মাঝে সরবরাহ করা হয়।
এ প্রক্রিয়ায় গাছের শেকড় প্রয়োজনীয় খাদ্য সংগ্রহ করে এবং পরিষ্কার পানি পুনরায় মাছের ট্যাংকে ফিরে আসে। এ পদ্ধতিতে সবজি উৎপাদন অন্য যে কোনো পদ্ধতির চেয়ে ফলপ্রসূ ও আশাব্যঞ্জক প্রতীয়মান হয়েছে।বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) উদ্ভাবিত এ পদ্ধতিতে সবজি চাষের জন্য মাটি ও সারের দরকার না হলেও মাছকে যথানিয়মে খাদ্য সরবরাহ করতে হয়।
এ পদ্ধতিতে খুবই স্বল্প খরচে বাড়ির আঙিনায় মাছ ও শাকসবজি চাষ করে পারিবারিক চাহিদা মেটানো যেতে পারে। লক্ষণীয় যে, মাছ ও সবজি চাষের এ সমন্বিত পদ্ধতি সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব। এতে অধিক ঘনত্বে মজুদকৃত মাছের পুকুরের পানিদূষণ হ্রাস করে মাছের উৎপাদন সন্তোষজনকভাবে বৃদ্ধি করা সম্ভব।