সর্বশেষ

পাইপ কেটে বানানো হল কোয়েল পাখি ধরার ফাদ, ফাদ পাততেই একসাথে ধরা পড়ছে শত শত কুয়েল পাখি, যুবকের দারুন পদ্ধতিতে পাখি ধরার ভিডিওটি তুমুল ভাইরাল!

হেমন্তের শেষ দিকে যখন মোহনা অঞ্চলে নদীতে চর জাগে, তখন তার ওপর পলির পরিমাণ কেবলই দেড়-দুই ইঞ্চি। বাকি সবটুকুই বালু। শীতের আগেই এমন পলিময় ভেজা এলাকায় গজাতে শুরু করে নানা জাতের ঘাস ও মুথা। এর মধ্যে উরি ঘাস, দুর্বা ঘাস, দু-তিন প্রজাতির মুথা, ভাদালি বা ভাদাইল, নলখাগড়া ও শণ ঘাস বেশি।




এসব ঘাস-মুথার কুশি (যখন এগুলো পলিমাটির কেবল কয়েক সেন্টিমিটার উপরে ওঠে) থাকে খুবই নরম। এর নরম ঘাস ও শিকড় পরিযায়ী কোয়েল খুব প্রিয়। আর পলির ভেতর বা প্রায় ওপরের দিকে থাকে হাজার হাজার কীট, পোকা ও কেঁচো এবং ওই ধরনের সরু অমেরুদণ্ডী প্রাণীর দল। হাজার হাজার কিলোমিটার উত্তরে যেসব দেশ, সেখান থেকে যে শতসহস্র মোহনার পাখি বা জলাভূমির পাখি (ওয়েটল্যান্ড বার্ড) আসে,




তাদের সবার পছন্দ প্রকৃতি পরিবেশিত এ খাবারের তালিকা।গত ২০ নভেম্বর খুব ভোরে নিঝুম দ্বীপের অদূরে নোঙর করা জাহাজ থেকে নামানো জীবনতরিতে চেপে আমরা সাত-আটজন যখন চরের কাছাকাছি পৌঁছালাম, তখন সেখানকার আকাশে-বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছিল হাটবাজারে ছড়িয়ে পড়া মানুষের গুঞ্জনের মতো হাজারো পাখির কলরব। সামান্য যে কুয়াশা, তাতে ৫০ মিটার দূরের কিছু দেখা যাচ্ছিল না।

তবে পাখির কূজন গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছিল।আমাদের সফরসঙ্গী ছিলেন বাংলাদেশে নবনিযুক্ত নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত এনে’জেরারড ভ্যান লিউয়েন। তিনি কৈশোর থেকেই পাখিপ্রেমিক।




রাষ্ট্রদূতই প্রথম বললেন, দূরে যে পাখির কলরব, তার মাঝে সবচেয়ে বেশি শুনতে পাচ্ছেন লালশির বা উইজিয়ন নামের হাঁসের ডাক। এই ডাকের সঙ্গে আমার আসলেই পরিচয় ছিল না। রাষ্ট্রদূত এটাও জানালেন, লালশির তাঁদের শহর থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিচরণ করে।

পরে যখন ছোট স্পিডবোট নিয়ে পাখি দেখতে বের হই, তখন কেওড়া বনের পাশে এবং নদীর তীরেও কিছু পরিযায়ী পাখি দেখি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল একটি শিকারি বাজ বা শাহিন বা পেরেগ্রিন ফ্যালকন। সে নদীপারের একটি উঁচু গাছের ডালে প্রায় খাড়াখাড়িভাবে দাঁড়িয়ে ছিল। আমরা খুব কৌশলে ওর ৩০ মিটারের মধ্যে নৌকা নিয়ে পৌঁছাতে পারি।ডমার চরে আরও নজরে এল সোনা বাটান, চা পাখি, লাল-পা পিউ, সবুজ-পা পিউ, মাছরাঙা,




খঞ্জনি, তুলিকা বা পিপিট, কানিবক, শালিক, হলদে পাখি, দোয়েল, সুইচোরা প্রভৃতি। চরে বিশ্রামে ব্যস্ত ছিল ডজন তিনেক চখাচখি, চকাচকি বা রুডি শেলডাক। রাজহাঁস ছাড়া দেশে পরিযায়ী হাঁসের মধ্যে এটাই সবচেয়ে বড়।

চমৎকার রঙের একহারা কমলা-পিঙ্গল বর্ণ। কেবল পুরুষের ঘাড়ে একটা আধা কালচে বলয় থাকে, যা মাদি হাঁসে নেই।ডমার চরের দূরের এক অংশে আধমরা নদীর অংশজুড়ে জাল পেতে রেখেছিলেন জেলেরা।




সেখানে চোখে পড়ল সবচেয়ে বেশি যাঠুয়া বক, মাঝারি বক, ছোট বক, গোবক, কানি বক, কয়েক শ জল কবুতর, অর্ধশত শঙ্খচিল, বড় গুলিন্দা, ছোট গুলিন্দা, কালোলেজ জৌরালি, সোনা বাটান, কেন্টিসের জিরিয়া, ছোট জিরিয়া, লাল-পা পিউ ও সবুজাভ পিউ।পরদিন চর কুকরিমুকরি দ্বীপের চারপাশের নদীর পারে পারে পাখির শুমার করা শুরু করলাম ভোর থেকে।

আগে ভাবিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জলাভূমিতে শীতে পরিযায়ন করতে আসা ছোট সরালির বড় বড় দল কুকরিমুকরির আশপাশে দেখতে পাব।

সব মিলিয়ে হাজারের বেশি সরালি, প্রায় ততোধিক সোনালি বাটান ও অন্যান্য বাটান বা প্লোভারস, ডজন কয়েক খোঁয়াজ বা খোঁয়াজ-খিজির, উল্টোঠোঁটি বা অ্যাভোছেট, শ খানেক কাস্তেচরা বা আইবিস, চখাচখি, লালশির, পিয়ং হাঁস, মাছরাঙা, পানকৌড়ি ইত্যাদি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *