সর্বশেষ

ইঁদুর বিক্রি করে মামুনের মাসে আয় ৬০ হাজার টাকা

বছরে শত শত কোটি টাকার ফসল খায় কিংবা নষ্ট করে ইঁদুর। সরকারের কর্মসূচিও আছে অধিক ইঁদুর নিধনকারীকে পুরস্কৃত করার। এই পরিস্থিতিতে বাণিজ্যিকভাবে ইঁদুর চাষ বিস্মিত হওয়ার মতোই ঘটনা বটে। কিন্তু এটাই সত্য।




রাজশাহী কাটাখালীর সমসাদিপুরে সালাহউদ্দিন মামুন বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করছেন অ্যালবিনো প্রজাতির সাদা ইঁদুর।

একসময় শখের বশে সালাহউদ্দিন মামুনের ইঁদুর পালন এখন ব্যবসায়ে পরিণত হয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা ইঁদুরগুলো দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্রি করছেন তিনি। শুধু তাই নয়, অ্যালবিনো প্রজাতির সাদা ইঁদুর, ইঁদুরের কঙ্কাল ও মমির চাহিদা বিদেশে থাকলেও রপ্তানি করতে পারছেন না মামুন।




সম্প্রতি ভারতের গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইঁদুরের অর্ডার পেয়েও দেশের রপ্তানি গেজেটে ইঁদুরের কোনো অপশন না থাকায় পাঠাতে পারেননি তিনি। তার দাবি, রপ্তানির সুযোগ পেলে এটি সম্ভাবনার দুয়ার খুলবে। ইঁদুর রপ্তানির জন্য আবেদন করবেন বলে জানান সালাহউদ্দিন মামুন।




জানা যায়, সালাহউদ্দিন মামুন প্রতি মাসে ৪৫০ থেকে ৫০০টি অ্যালবিনো প্রজাতির সাদা ইঁদুর বিক্রি করেন। বর্তমানে খামারে বিক্রির উপযোগী ইঁদুর রয়েছে ৪০০টির বেশি। এগুলো প্রতিটির ওজন ২৫ গ্রাম করে। এছাড়া বাচ্চা দেওয়ার মতো ইঁদুর রয়েছে ১৮০টি। প্রতিটি ইঁদুর তিনি ১২০ টাকা দরে বিক্রি করেন। যদিও শুরুর দিকে প্রতিটি ইঁদুর বিক্রি করেছেন মাত্র ৪০ টাকা দরে। বছরে প্রায় ৮ লাখ টাকার ইঁদুর বিক্রি করেন বলে জানান সালাহউদ্দিন মামুন।




রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ল্যাব সহকারী পদে কাজ করেন সালাহউদ্দিন মামুন। তিনি বলেন, ২০১৭ সালের শেষের দিকে সহকর্মী মাসুদের সঙ্গে ল্যাবের সামনে বসেছিলাম।




এসময় উদ্ভিদবিজ্ঞানের এক পিএইডি গবেষক ইঁদুরের চারটি বাচ্চা দিয়ে সেগুলোকে ছেড়ে দিতে বলেন। ছোট বাচ্চাগুলো দেখে মায়া লাগে। এগুলো ছেড়ে দিলে তো কাক বা অন্য প্রাণী মেরে ফেলবে। আর ইঁদুরগুলো অসুস্থ। তাই তাদের বাড়ি নিয়ে যত্ন করি। জুতা রাখার বাক্সে কাপড় দিয়ে থাকার ব্যবস্থা করি।

খাবার হিসেবে কিছু চাল, গম দিতাম। এরই মধ্যে বিড়াল একটি ইঁদুরের বাচ্চা খেয়ে ফেলে। বাকি তিনটাকে বিড়ালের হাত থেকে রক্ষা করতে ব্যবস্থা নিই। মাসখানেক পর একটি ইঁদুর ১০টি বাচ্চা জন্ম দেয়। তার সপ্তাহখানেক পরে আরও একটি ইঁদুর ১০টি বাচ্চা দেয়।

তিনি আরও বলেন, ধীরে ধীরে ইঁদুর বেশি হয়ে যাওয়ায় ২০টি আমাদের বিভাগের শিক্ষককে দেয়। তিনি আমাকে ১ হাজার টাকা দেন। আমি তো অবাক, ইঁদুর বিক্রি করে টাকা পেলাম!

শখ থেকে উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার ব্যাপারে মামুন বলেন, ইঁদুরের বাচ্চা দেওয়ার বিষয়টি আমি বিভাগে গল্প করি। এসময় জামার্নির এক গবেষক প্রাণিবিদ্যা বিভাগের মিউজিয়ামে ট্যাক্সিডার্মি নিয়ে কাজ করছিলেন। তার গবেষণার জন্য আমার কাছে ইঁদুরগুলো চাইলেন। তখন আমি তাকে ২০টি ইঁদুর দিই। তিনি আমাকে ১ হাজার টাকা দেন।

ব্যতিক্রমী এই খামারি বলেন, কোভিড-১৯ এর ভ্যাক্সিন তৈরির চেষ্টা করছেন এমন একটি নামকরা দেশীয় প্রতিষ্ঠান। তারা আমার কাছ থেকে ৫০টি ইঁদুর নিয়েছিল। এছাড়া চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিয়মিত কল করা হয় ইঁদুরের জন্য। তাদের সঙ্গে আমার যোগাযোগ রয়েছে। চাহিদা ব্যাপক, কিন্তু সরবরাহ করতে পারি না।

সালাহউদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় ইঁদুরের খামারে কাজ করছেন তার বাবা বেলাল উদ্দিন। তিনি বলেন, প্রতিদিন পুরো খামার পরিষ্কার করি। নতুন করে কাঠের গুঁড়া দিই।

এছাড়া নষ্ট হয়ে যাওয়া ইঁদুরের ঘর (কাগজের কার্টন) পরিবর্তন করে দিই। প্রতিদিন সকালে একবার খাবার দিলে সারাদিন ও রাত চলে যায়। এই ইঁদুরগুলো মূলত বিকেলে কার্টনের ভেতর থেকে বের হয়। তখনই চাল, গম, ভুট্টা, ডাল দিয়ে তৈরি খাবারগুলো খায়।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম সাউদ জানান, ইঁদুর ল্যাবরেটরি অ্যানিমেল হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষকরা গবেষণার দিকে এগিয়ে আসছেন। ইঁদুরের চাহিদাও বেড়েছে। কেউ যদি মানসম্মত ইঁদুর উৎপাদন করতে পারেন তাহলে তার সফল হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *